Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

ইঁদুর দমন করে স্থানীয় কৃষকের বন্ধু হয়েছেন ডুমুরিয়ার এইচ এম সিদ্দিকুর রহমান

ইঁদুর দমন করে স্থানীয় কৃষকের বন্ধু হয়েছেন ডুমুরিয়ার এইচ এম সিদ্দিকুর রহমান
কৃষিবিদ শারমিনা শামিম১ মো: আবদুর রহমান২
কৃষি বাংলাদেশের মূল চালিকাশক্তি। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কৃষি আমাদের প্রধান অবলম্বন। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি শিক্ষিত শ্রেণীও এখন কৃষিকে পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছে। গড়ে তুলছে মাঠ ফসল, ফলফলাদিসহ মৎস্য, পোল্ট্রি ও গবাদিপশুর খামার।
দেশে বর্তমানে পোল্ট্রি শিল্প অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে। মানব দেহে আমিষের চাহিদা পূরণে পোল্ট্রি বিশেষ অবদান রাখছে। করোনার কারণে খামারিদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার খামারিদের প্রণোদনা প্রদান করেছেন। বাজারের অস্থিতিশীল অবস্থাসহ বেশ কিছু সমস্যা এখনো রয়ে গেছে। এসবের মধ্যে ইঁদুরের উৎপাত একটি অন্যতম সমস্যা। এর কারণে প্রতি বছর প্রাণিসম্পদে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ অনেকগুণ বেড়ে যায়। ইঁদুর দ্বারা খামারের খাবার নষ্ট, খাবারের গুণগতমান নষ্ট করাসহ নানান রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে। প্রাণিসম্পদের প্রায় সকল প্রজাতির জন্যই ইঁদুর অত্যন্ত ক্ষতিকর। বিশেষ করে পোল্ট্রি খামার এবং গবাদিপ্রাণি পালনে বেশি ক্ষতি করে থাকে।
খুলনার ডুমুরিয়ার আরশনগরের এইচ এম সিদ্দিকুর রহমান একজন পোল্ট্রি হ্যাচারি ব্যবসায়ী। তার ১৯৯০ সালে খুলনা শহরে কেডিএ এভিনিউতে তার বোনের জমিতে পোল্ট্রি ফার্মস ফিডের ব্যবসা শুরু করেন। পরবর্তীতে সেখানে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের কারণে ব্যবসা অনত্র সরিয়ে নেন। তখন তিনি চিন্তা করেন মুরগির খাবারের পাশাপাশি তিনি বাচ্চা উৎপাদন করবেন। এ সময়ে ডুমুরিয়ার আরশনগরে পৈতৃক জমিতে তিনি নিজেই ছোট পরিসরে মুরগী পালনের পাশাপাশি হ্যাচারিতে (খামারে) ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা উৎপাদন শুরু করেন।
মাঠের মাঝে খামার তৈরিতে সিদ্দিক সাহেব মাঠ লেভেলের থেকে ৫ ফুট উঁচু করে ভিত তৈরি করেন এবং সেটা প্লাস্টার করে নেট ফিনিশিং করে দেন। খামারের ভেতরের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য কিছুদূর পর পর মাঠ লেভেলে ৩ ইঞ্চি ব্যাসের ছিদ্র রাখেন। মুরগির খাবারের উচ্ছিষ্টগুলো নিচে পড়ার কারণে মাঠের ইঁদুর সেগুলো খেতে আসে। খাবারের লোভে ইঁদুরগুলো তখন তিন ইঞ্চি ব্যাসের ছিদ্রপথে ঢুকে যায় এবং খামারের ভিথের দেওয়াল নেট ফিনিশিং থাকার কারণে বেয়ে উপরে উঠতে পারে না। ফলে ছিদ্র পথেই থেকে যায়। তখন সিদ্দিক সাহেব ও খামারের কর্মচারীগণ ঐ সব ছিদ্রের মুখগুলো আটকিয়ে দেন এবং খামারের উপর থেকে পানি প্রয়োগ করেন। ফলে ইঁদুর পানিতে ডুবে মারা যায়। প্রথম অবস্থায় মৃত ইঁদুর গুলিকে বস্তায় ভরে মাটিতে পুঁতে ফেলতেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ইঁদুর নিধন কর্মসূচিতে কিভাবে অনুপ্রাণিত হলেন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, কয়েক বছর আগে তার ছোট ভাই নিধনকৃত ইঁদুরের ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেন এবং ইঁদুরের সেইসব ছবি ভাইরাল হয়। নিধনকৃত ইঁদুরের ছবি দেখে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ খুলনার জেলা ও উপজেলা  কৃষি অফিসার মহোদয়ের সংগে তার যোগযোগ হয়। ঊর্ধ্বতন  কৃষি কর্মকর্তাগণ তার ফার্ম ভিজিট করেন এবং ইঁদুর নিধনের কৌশল প্রত্যক্ষ করেন। পরবর্তীতে উপজেলা কৃষি অফিসার মহোদয়ের পরামর্শমতো নিধনকৃত ইঁদুরের লেজ সংগ্রহ করে উপজেলা কৃষি অফিসে জমা দেন। এভাবে তিনি মাঝেমধ্যেই তার ফার্মে ইঁদুর মারা কার্যক্রম  পরিচালনা করে থাকেন।
ইঁদুর শুধু খাবারই খায় না বরং পোল্ট্রির বেশ কিছু রোগের বিস্তার ঘটায়, এ কারণে তিনি মাঝে মধ্যেই এ কার্যক্রম চালান। ঝড় বর্ষার সময়ে মাঠের সব ইঁদুর তার ফার্মে এসে আশ্রয় নেয় এবং এসময়েই সবচেয়ে বেশি ইঁদুর মারা পড়ে। আরেকটি বিষয় হলো তার ফার্ম ও হ্যাচারির অবস্থান মাঠের মধ্যে এ কারণে ঐ মাঠে ইঁদুরের দ্বারা কোন ফসলই নষ্ট হয় না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
পোল্ট্রি ব্যবসার পাশাপাশি তার নিজস্ব প্রায় আট বিঘা জমিতে নানা প্রকার মৌসুমি সবজির চাষ করেন। সিদ্দিক জানান, তার ফার্মে বছরের পরিত্যক্ত লিটার সবজির জমিতে প্রয়োগ করেন। অন্য কোন রাসায়নিক সার প্রয়োগ করেন না। এ কারণে উৎপাদিত সবজির রং ও স্বাদ ভালো হয়। সবজির বালাই দমনের বিষয়ে জানান, তেমন পোকামাকড় লাগে না, আর যদিও দু-একটা লাগে সেক্ষেত্রে হাত দিয়ে দমন করেন ও কৃষি বিভাগের পরামর্শ গ্রহণ করেন। কোন প্রকার রাসয়নিক কীটনাশক ব্যবহার করেন না। উৎপাদিত সবজি নিজস্ব প্রয়োজন মিটিয়ে স্থানীয় বাজারে তিনি বিক্রি করেন। বাজারে তার উৎপাদিত সবজির চাহিদাও প্রচুর এবং ভালো দামে বিক্রি হয়। অনেক সময়ে সবজি পাইকারগণ তার ফার্মে এসে সবজি কিনে নিয়ে যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে স্বীকৃতি বিষয়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে ইঁদুর নিধনের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন। তবে গত বছর জাতীয় পর্যায়ে তিনি দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিলেন।
এইচ এম সিদ্দিকুর রহমানের ফার্মস পোল্ট্রি হ্যাচারিতে ৩৫০ ফুট বাই ৫০ ফুটের ৩টি শেড রয়েছে, যার দুইটি শেডে মুরগী পালন করেন ও ১টি শেডে ব্রয়লার মুরগীর বাচ্চা উৎপাদন করেন। তিনি ইনকিউবেটর মেশিনে মুরগীর বাচ্চা উৎপাদন এবং পোল্ট্রি সেক্টরের যাবতীয় সামগ্রী উৎপাদন করেন। উৎপাদিত ব্রয়লার মুরগীর এক/দুই দিনের বাচ্চা খুলনা, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুরসহ উত্তরবঙ্গের প্রায় সব জেলায় সরবরাহ করে থাকেন। এছাড়া বরিশাল, ভোলা, সিলেট ও নোয়াখালীতেও বাচ্চা সরবরাহ করেন। তার হ্যাচারিতে বছরে প্রায় ৩০ থেকে ৩২ লাখ মুরগীর বাচ্চা উৎপাদিত হয়ে থাকে। হ্যাচারি ও পোল্ট্রি খামারের বাজার মূল্য ১৫ কোটি টাকারও বেশি।
ফার্মস পোল্ট্রি হ্যাচারির পাশে তার দেড় বিঘার একটি পুকুরও রয়েছে যেখানে রুই, কাতলা, মৃগেল, তেলাপিয়া মাছের চাষও রয়েছে। নিজেকে একজন চাষা হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করে তিনি বলেন, আমি একজন নামকরা চাষা কারণ আমার ফার্মে উৎপাদিত সবগুলো পণ্যই জৈবপদ্ধতিতে উৎপাদন করা হয়। সেইসাথে আমার উৎপাদিত কৃষি পণ্যের বাজারমূল্যও অন্যদের তুলনায় অনেক ভালো পাই।
এইচ এম সিদ্দিকুর রহমান মনে করেন, শিক্ষিত যুবকেরা কৃষি কাজে আরো বেশি আত্মনিয়োগ করলে টোটাল কৃষি সেক্টরের উন্নতি আরো ত্বরান্বিত হবে। যেখানে কৃষির সর্বশেষ প্রযুক্তি প্রয়োগের ফলে আধুনিক ও স্মার্ট কৃষি গড়ে উঠবে। কৃষির বিভিন্ন পণ্য জৈব পদ্ধতিতে উৎপাদিত হবে এবং সেইসাথে রপ্তনিমূখী কৃষি প্রসার ঘটবে। কৃষিবান্ধব বর্তমান সরকারের বাণিজ্যিক  কৃষির বাস্তবায়ন হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং ১৯৮৩ সাল থেকে জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান পরিচালনা করে আসছে। জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান ২০২১ বাস্তবায়নের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন জেলা থেকে প্রাপ্ত চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে পুরস্কার দেয়া হবে। জাতীয় পর্যায়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গত বছরের ইঁদুর নিধনকারীদের কার্যক্রমের উপর ভিত্তি করে ৫টি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রদান করা হবে। ইঁদুর নিধন অভিযান-২০২৩ এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় জাতীয়পর্যায়ে জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান ২০২২ এর কার্যক্রমের উপর ভিত্তি করে ৫টি ক্যাটাগরীতে পুরস্কারের জন্য মনোনীত তালিকা সারণি দ্রষ্টব্য। তালিকা অনুযায়ী এইচ এম সিদ্দিকুর রহমান কৃষক ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান প্রাপ্ত হয়েছেন। তিনিসহ জাতীয়পর্যায়ে পুরস্কার প্রাপ্তদের জানাই অভিনন্দন ও আন্তরিক শুভেচ্ছা ।

লেখক : ১আঞ্চলিক বেতার কৃষি অফিসার, ২এআইসিও, কৃষি তথ্য সার্ভিস, আঞ্চলিক কার্যালয়, খুলনা। মোবা: ০১৯৪৩-৫১৭৫০৬, ই-মেইল :­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­ khulna@ais.gov.bd


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon